গরুর বাট ফোলাঃ গরুর ম্যাসটাইটিস রোগের চিকিৎসা

রোগের নামঃ ম্যাসটাইটিস
রোগের চিকিৎসাঃ এন্টিনায়োটিক ও ব্যাথানাশক
রোগের লক্ষণঃ ওলান ফুলে যাবে এবং জ্বর আসবে
রোগের ধরণঃ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত
জীবাণুর নামঃ ম্যাসটাইটিস
সংক্রমণঃ গরু, ছাগল - ভেড়া এবং মহিষ
মৃত্যুর হারঃ সর্বোচ্চ ১%
সংক্রমণের বয়সঃ যেকোন বয়সের গরু - মহিষ বা ছাগল - ভেড়া
চিকিৎসাঃ প্রায় চিকিৎসায় প্রাণি ৯৯ ভাগই সুস্থ্য হয়


গাভী পালন করেন আর ম্যাসটাইটিস রোগের সাথে পরিচিত না এমন খামারী একটাও পাবেন না। গাভী গরুর সব থেকে জটিল এবং বেশি হওয়া রোগ হলো ম্যাসটাইটিস। গরুর ম্যাসটাইটিস রোগের চিকিৎসা হলো মারবোফ্লক্সিন গ্রুপের এন্টিবায়োটিক এবং ব্যাথানাশক ওষধ প্রয়গ করা এবং ওলানে বরফ এর স্যাক দেওয়া। এই রোগ গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিস এর দেখা যায়। তবে সব থেকে বেশি গরুর ম্যাসটাইটিস দেখা যায়। গরুর ম্যাসটাইটিস রোগের লক্ষণ হলো ওলান ফুলে যাবে, ওলান শক্ত হয়ে যাবে, গরুর শরীরে জ্বর থাকবে ও গরুর ওলান ব্যাথা হবে। আমি একজন ভেটেনেয়ারি ডাক্তার, তাই আমি আপনাদের গরুর ম্যাসটাইটিস রোগের চিকিৎসা, লক্ষণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ এবং কী ঔষধ দিতে হবে তা ভালো ভাবে জানাতে পারবো।


গরুর ম্যাসটাইটিস রোগের চিকিৎসা
গরুর ম্যাসটাইটিস রোগের চিকিৎসা




আজকের এই পোস্ট টি সম্পর্ণ পড়লে আপনারা জানতে পারবেন-
  • গরুর ম্যাসটাইটিস রোগের চিকিৎসা
  • গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের কারণ কী?
  • গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের লক্ষণ কী?
  • গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের প্রতিকার কী ভাবে করতে হয়?
  • গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের প্রতিরোধ কী ভাবে করতে হয়?
  • গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের ঔষধ কী?

গরুর ম্যাসটাইটিস রোগের চিকিৎসা


সকল রোগের জন্য প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা। আপনার পশুর যদি কোনো সমস্যা দেখা দেই, তাহলে আপনার প্রথম কাজ হবে রোগ নির্ণয় করা। গরুর ম্যাসটাইটিস রোগের চিকিৎসা হলো ভলো একটি এন্টিনায়োটিক ও ব্যাথানাশক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। আমি আজকে আপনাদের ম্যাসটাইটিস রোগের চিকিৎসা টি নিম্নে দিলাম-

ঔষধের নাম ডোজ প্রয়োগ - কাল
inj. Marbo Vet ১০০ কেজি ওজনের জন্য ১০ মি.লি. মাংসে প্রয়োগ করতে হবে ৩ - ৫ দিন
inj. Ranacin Vet ১০০ কেজি ওজনের জন্য ১০ মি.লি. মাংসে প্রয়োগ করতে হবে ৩ - ৫ দিন
inj. Keto A Vet ১০০ কেজি ওজনের জন্য ১০ মি.লি. মাংসে প্রয়োগ করতে হবে ৩ - ৫ দিন


আপনারা গাভীর ওলান থেকে বার বার দুধ দহন করবেন এবং বরফ দিয়ে স্যাক দিবেন।  ম্যাসটাইটিস রোগের জন্য আপনাদের আরো কিছু লক্ষণ খেয়াল করতে হবে, যেমন গাভীর ওলান এ দুধ এর রং পালটে যাওয়া বা স্যাগরানি হয়ে দুধ আসা। এমন টা হলে উপরের ইনজেকশন গুলো তো দিবেন, তার ওলানের যে বাট এ এই সমস্যা দেখা দিবে তাতে "ম্যাসটাইটিস টিউব" দিতে হবে।

গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের কারণ কী?


রোগের কারণ যদি আপনার জানা থাকে তাহলে আপনি আগে থেকে পদক্ষেপ নিতে পারবেন যেন সেই রোগ না হয়। আজকে আপনাদের জানাবো ম্যাসটাইটিস রোগের কারণ কী? গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের কারণ হলো জীবাণু। আমাদের সকল সময় গাভির ওলান এবং গাভী থাকার স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন রাখতে হবে। প্রতিদিন জীবাণু নাশক স্প্রে করতে হবে। 


গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের কারণ কী
গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের কারণ কী


ম্যাসটাইটিস রোগ তখনি হয় যখন গাভীর বাট দিয়ে জীবাণু প্রবেশ করে। এখন আপনাকে জানতে হবে কোন সময়ে গাভীর বাট এর মুখ খোলা থাকে?  আমরা যখন দুধ দহন করি বা বাছুরে দুধ খেলে গাভির বাট এর মুখ তখন খুলে যায়। এই সময়ে ২০ - ৩০ মিনিট পর আবার বাট এর মুখ বন্ধ হয়ে যায়।

গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের লক্ষণ কী?


রোগের লক্ষণ না জানা থাকলে আমরা রোগ নির্ণয় করতে পারবো না। তাই আমাদের রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের লক্ষণ হলো গরুর ওলান শক্ত হয়ে ফুলে যাবে, গরুর শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে, গরুর খাওয়া দাওয়া কম করবে ইত্যাদি। আমরা এই লক্ষণ গুলো দেখলে বুঝবো গরুটির ম্যাসটাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এই রোগ দেখা দিলে আমরা সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থা করবো এবং এই লক্ষণ দেখা মাত্র আমরা বরফ দিয়ে ওলান মেসাজ করবো।


গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের লক্ষণ কী
গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের লক্ষণ কী



গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের প্রতিকার কী ভাবে করতে হয়?


সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে গরুর ম্যাসটাইটিস রোগের প্রতিকার করা যায়। আপনাদের প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে যে, আপনার গরুর ম্যাসটাইটিস হয়েছে কি না? আপনার ম্যাসটাইটিস এর লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানা থাকলে আপনাকে সঠিক ঔষধ এবং যা যা প্রয়জন তা করে ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের প্রতিকার করতে পারবেন।


গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের প্রতিকার কী ভাবে করতে হয়
গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের প্রতিকার কী ভাবে করতে হয়



গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের প্রতিরোধ কী ভাবে করতে হয়?


সকল রোগের প্রতিরোধ করাই উত্তম কাজ। আপনার খামারে যদি আপনি রোগ থেকে মুক্ত রাখতে পারেন তাহলে আপনি খামারে লাভবান হতে পারবেন। ম্যাসটাইটিস রোগ এর প্রতিরোধ সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে হয়তো আপনার খামারে ম্যাসটাইটিস না দেখা দিতে পারে। গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের প্রতিরোধ করার উপায় হলো গাভীর বাসস্থান সকল সময় পরিষ্কার রাখা এবং দুধ দহন করার পর গাভী কে খাবার দিবেন, যেনো ৩০ মিনিট দাড়িয়ে থাকে। 


গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের প্রতিরোধ কী ভাবে করতে হয়
গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের প্রতিরোধ কী ভাবে করতে হয়



আপনাদের আগেই বলেছি গাভীর বাট দিয়ে জীবাণু প্রবেশ করে ম্যাসটাইটিস রোগ না ওলান ফোলা রোগ হয়। গাভীর বাচ এর মুখ খোলে দুধ দহন করার সময় ও বাছুরে দুধ পান করার সময় এবং বাট এর মুখ বন্ধ হতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট। তাই আমরা দুধ দহন করার পর গাভী কে খেতে দিবো যেনো নিচে না শুয়ে পড়ে। তাহলে জীবাণু তার বাট এর কাছে আসার সুজক পাবে না।

গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের ঔষধ কী?


রোগ বুঝে ঔষধ দেওয়া টাই হলো ভালো ব্যাপার। যে রোগ এর লক্ষণ গুলো উপলব্ধি করতে পারবে ভালো করে, সে রোগের ঔষধ ও ভালো দিতে পারবে। গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের ঔষধ হলে ভালো একটি এন্টিবায়োটিক এবং ভালো একটি ব্যাথানাশক ঔষধ


গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের ঔষধ কী
গরুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের ঔষধ কী



উপসংহারঃ

গরুর ম্যাসটাইটিস রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে যদি কোনো ভুল তথ্য দিয়ে থাকি তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন। আসা করি কোনো ভুল তথ্য আপনাদের দিতেছি না। এই পোস্টে বানান বা বাক্যে কোনো ভুল থাকলে আমাকে মাফ করবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url