ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডা বা মাইকোপ্লাজমোসিস রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও ঔষধ
ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডার ঔষধ খাওয়ার পূর্বে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করতে হবে। ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডা বা মাইকোপ্লাজমোসিস বা CRD (সি আর ডি) রোগের রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও ঔষধ নিয়ে বিস্তারিত এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। এই রোগ টি Mycoplasma gallisepticum (মাইকোপ্লাজমা গেলিসেপটিকাম) নামক জিবাণুর আক্রমনে হয়ে থাকে। আজকের এই আর্টিকেলে যে সকল বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে সেগুলো হলো-
- ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডা বা মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ পরিচিতি
- মাইকোপ্লাজমোসিস কি?
- মাইকোপ্লাজমা কি?
- মাইকোপ্লাজমোসিস বা ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজিজ বা সি আর ডি রোগ
- ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডার সঠিক চিকিৎসা
- ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডার ঔষধ
- মুরগির ঠান্ডা বা মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডা বা মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ পরিচিতি
রোগের নাম |
ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডা বা মাইকোপ্লাজমোসিস |
ধরণ |
মাইকোপ্লাজমা জিবাণু জনিত রোগ |
জীবাণুর নাম |
Mycoplasma (মাইকোপ্লাজমা) |
সংক্রমণ |
মুরগি |
মৃত্যুর হার |
খুবই কম |
সংক্রমন সময় |
মুরগির যেকোন বয়সে |
মাইকোপ্লাজমোসিস কি?
মাইকোপ্লাজমোসিস হলো মাইকোপ্লাজমা জিবাণু দ্বারা সংক্রামিত একটি রোগ। প্রয় সকল বয়সের মুরগির মাইকোপ্লাজমোসিস রোগে আক্রান্ত হয়। মাইকোপ্লাজমোসিস রোগের আর একটি নাম রয়েছে, নামটি হলো সেকুলাইটিস। মাইকোপ্লাজমা জিবাণুর বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। এই জিবাণু শ্বাসনতন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করে। মাইকোপ্লাজমা জিবাণু গুলোর নাম হলো মাইকোপ্লাজমা গেলিসেপটিকাম, মাইকোপ্লাজমা সাইনোভি, মাইকোপ্লাজমা এনাটিস, মাইকোপ্লাজমা গেলিনাম ইত্যাদি। নিম্নে এই সকল জিবাণু গুলো কোনটি কোন প্রাণীর শ্বাসতন্ত্রে আক্রমন করে, তার একটি তালিকা দেওয়া হলো।
মাইকোপ্লাজমা জিবাণুর নাম |
আক্রমনের ধরণ |
গেলিসেপটিকাম |
মুরগি ও টার্কিতে ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজিজ (CRD) |
সাইনোভি |
টার্কি ও মুরগিতে ইনফেকশাস সাইনোসাভাইটিস ও শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করে |
এনাটিস |
হাঁসের শ্বাসতন্ত্রের
প্রদাহ সৃষ্টি করে |
গেলিনাম |
মুরগি ও টার্কির বাচ্চায় ভাইরাসের জটিলতায় এয়ার সেকুলাইটিস সৃষ্টি করে |
মাইকোপ্লাজমা কি?
ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া থেকে আলাদা এক ধরণের জিবাণুর নাম মাইকোপ্লাজমা। এই জিবাণু সাধারণত মুরগির শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই জিবাণু দ্বারা আক্রান্ত রোগ কে মাইকোপ্লাজমোসিস বলে।
মাইকোপ্লাজমোসিস বা ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজিজ বা সি আর ডি রোগ
মাইকোপ্লাজমোসিস বা ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজিজ বা সি আর ডি রোগ হলো মুরগির জিবাণু জনিত শৃবসনতন্ত্রের একটি রোগ। প্রয় সকল বয়সের মুরগি এই রোগে আক্রান্ত হয়। তবে ২ থেকে ৬ সপ্তাহ বয়সের মুরগি এই রোগে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
মাইকোপ্লাজমোসিস বা ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজিজ বা সি আর ডি রোগ হয় মাইকোপ্লাজমা জিবাণুর আক্রমনে। মাইকোপ্লাজমা জিবাণু শ্বাসনতন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করে, এর ফলে মুরগির ঠান্ডা ভাব দেখা যায়।
ব্রয়লার মুরগি মাইকোপ্লাজমোসিস বা ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজিজ বা সি আর ডি রোগ বেশি আক্রান্ত হয়। শীতকালে এই রোগ বেশি দেখা যায়।
মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ ছড়ানোর মাধ্যম
- মাইকোপ্লাজমা জিবাণু বাতাস এর মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
- মাইকোপ্লাজমা জিবাণু দ্বারা আক্রান্ত মুরগির ডিমের বাচ্চা এই রোগে আক্রান্ত হয়।
- মাইকোপ্লাজমা জিবাণু দ্বারা আক্রান্ত এক মুরগি হতে অন্য মুরগির যে কোনো মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
- ইঁদুর, আঠালির সাহায্যে মাইকোপ্লাজমা জিবাণু সংক্রমন হতে পারে।
ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডা রোগের লক্ষণ
ব্রয়লার মুরগির মুরগির ঠান্ডা বা মাইকোপ্লাজমোসিস রোগে আক্রান্ত হলে যে সকল লক্ষণ গুলো দেখা যায়, সেগুলো হলো-
- মুরগির নাকে ঘড় ঘড় শব্দ হবে।
- মুরগির কাশি হবে।
- মুরগির নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হবে।
- আক্রান্ত মুরগি খাবার কম খাবে।
- আক্রান্ত মুরগির ওজন কমে যাবে।
- আক্রান্ত মুরগি ডিম কম দেই।
- এই রোগে আক্রান্ত মুরগির মৃত্যু হার কম হয়।
- এ রোগে আক্রান্ত মুরগি রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়।
মাইকোপ্লাজমোসিস বা ঠান্ডা রোগের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট
মাইকোপ্লাজমোসিস বা ঠান্ডা রোগে আক্রান্ত মুরগির পোস্টমর্টেম রিপোর্ট করলে, যে সকল বিষয় গুলো দেখা যাবে, সেগুলো হলো-
- হৃদপিণ্ড অনেক বড় হয়ে যাবে।
- হৃদপিণ্ডে সাদা ফাইব্রিন দেখা যাবে।
- মুরগির শ্বাসনালী লালচে হয়ে যাবে।
- মুরগির শ্বাসনালী ফুলে যাবে।
- মুরগির শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হবে।
মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা
মুরগি মাইকোপ্লাজমোসিস রোগে আক্রান্ত বা মাইকোপ্লাজমা জিবাণু দ্বারা আক্রন্ত আছে কি না? তা পরীক্ষা করা যায়। বর্তমানে রঙিন অ্যান্টিজেন দিয়ে মাইকোপ্লাজমোসিস রোগের জীবাণুর অস্তিত নির্ণয় করা যায়। নিম্নের মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ নির্ণয় পদ্ধতি দেওয়া হলো।
- যে মুরগির খামারে পরীক্ষা করা হবে, সেই খামারে প্রতি ১০০ মুরগির মধ্যে ৫ টি মুরগি নির্বাচন করতে হবে।
- এবার প্রটিতি মুরগি পাখনার নিচে শীরা হতে সিরিঞ্জে করে ১ মি.লি. রক্ত নিতে হবে।
- এবার ১০-১৫ মিনির রেখে দিতে হবে।
- এখন সিরিঞ্জে রক্ত জমাট বেধে যাবে এবং সামনের দিকে রক্তের সাদা শ্রীরাম পাওয়া যাবে।
- এবার একটি সাদা প্লেটপ ১ ফোটা রক্তের শ্রীরাম ও ১ ফোটা রঙিন অ্যান্টিজেন দিতে হবে।
- এখন কাঠের টুকরা দিয়ে নাড়াচাড়া করে ভালো করে মিক্স করতে হবে।
- এবার খেয়াল করুন মিশ্রন টি যদি দুধের ছানার মতো জমাট বেধে যায়, তাহলে ঐ মুরগি মাইকোপ্লাজমা জিবাণু দ্বারা আক্রান্ত।
- মিশ্রণ টি যদি কোনো পরিবর্তন না হয়, তাহলে ঐ মুরগি মাইকোপ্লাজমা জিবাণু দ্বারা আক্রান্ত না।
ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডার সঠিক চিকিৎসা
মুরগির ঠান্ডা লাগছে বুঝতে পারলে, সাথে সাথে মুরগির ঠান্ডার সঠিক চিকিৎসা দিতে হবে। নিম্নে কিছু ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডার ঔষধ ও এর ব্যবহার এর তালিকা দেওয়া হলো। এর মধ্যে যে কোনো একটি ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন।
ব্রয়লার মুরগির ঠান্ডার ঔষধ
ঔষধের নাম |
ঔষধের মাত্রা |
টাইলোসিন |
প্রতি লিটার খাবার পানিতে ২ গ্রাম টাইলোসিন মিশিয়ে তিন থেকে পাঁচ দিন খাওয়াতে হবে |
টিয়ামুলিন ৪৫% |
প্রতি লিটার খাবার পানিতে ১ গ্রাম টিয়ামুলিন ৪৫% মিশিয়ে তিন থেকে পাঁচ দিন খাওয়াতে হবে |
মাইক্রো স্টপ |
প্রতি লিটার খাবার পানিতে ১ গ্রাম মাইক্রো স্টপ মিশিয়ে দুই থেকে পাঁচ দিন খাওয়াতে হবে |
টাইলোভেট ২০০ |
প্রতি লিটার খাবার পানিতে ২ গ্রাম টাইলোভেট ২০০ মিশিয়ে তিন থেকে পাঁচ দিন খাওয়াতে হবে। |
মুরগির ঠান্ডা বা মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
যে কোনো রোগ হওয়ার থেকে ভালো রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহন করা। খামারে কোনো রোগে আক্রন্ত হলে ঔষধ খরচ হবে, মুরগির ওজন কম হবে, ডিম কম দিবে। তাহলে আপনি খামারে লাভবান হতে পারবেন না। মুরগির ঠান্ডা বা মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিম্নে দেওয়া হলো।
- লেয়ার মুরগির নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করা উচিত।
- লেয়ার মুরগির যে খামারে মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ ধরা পড়বে, সেই খামারের ডিম থাকে বাচ্চা ওঠানো বন্ধ করতে হবে।
- সব সময় মুরগির খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- মুরগির সকল ভ্যাকসিন গুলো ঠিক মোতো প্রয়োগ করতে হবে।