হাইব্রিড বেগুন চাষ পদ্ধতি ও হাইব্রিড বেগুনের বিভিন্ন জাত সমূহ

হাইব্রিড বেগুন চাষ পদ্ধতি

বেগুন বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি সবজি। এই বেগুনের অধিক ফলনের জন্য বিভিন্ন হাইব্রিড জাত রয়েছে। হাইব্রিড বেগুন চাষ পদ্ধতি সঠিক ভাবে জেনে চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া যাবে। আমাদের দেশে সব মৌসুমে বেগুন চাষ করা হয়। এক একটি মৌসুমে এক এক ধরণের জাতের বেগুন ভালো ফলে। বেগুন এমন একটি সবজি, যা মানুষ সারা বছর খেয়ে থাকে। এই সবজিতে অন্যান্ন সবজির থেকে বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। এই আর্টিকেলে হাইব্রিড বেগুন চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

হাইব্রিড বেগুন চাষে উপযুক্ত মাটি


হাইব্রিড বেগুন চাষ বাংলাদেশের সকল মাটিতেই ভালো হয়। তবে বেলে দোআাঁশ ও দোআাঁশ মাটিতে বেগুন ভালো ফলে। যেমন মাটি হোক না কেনো পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো হতে হবে। বেগুন চাষ করা জমিতে পানি জমলে সেই জমিতে বেগুন গাছ মারা যাবে। পানি জমে না এমন জমি বেগুন চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।

হাইব্রিড বেগুন চাষে উপযুক্ত সময়


হাইব্রিড বেগুন শীতকালে ভালো ফলন হয়। বেগুন ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালো ফলন হয়। এই জন্য বাংলাদেশে শীতকালে বেগুনের ভালো ফলন হয়। তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২৫ এর কম বা বেশি হলে বেগুনের ফুল ও ফল ঝরে যায় এবং বিভিন্ন রোগে বেগুন গাছ আক্রান্ত হয়।

হাইব্রিড বেগুনের বিভিন্ন জাত সমূহ


আমরা আগেই জেনেছি হাইব্রিড বেগুন সার বছর চাষ করা হয়। তবে সকল জাত সব মৌসুমে চাষ করা যায় না। এক একটি জাত এক একটি মৌসুমে চাষ করা হয়। বেগুন বাংলাদেশে সকল অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে চাষ করা হয়। শীতকালে বেগুন চাষ বেশি করা হয়। শীতকালে চাষ করা হাইব্রিড বেগুনের নির্দিষ্ট জাত রয়েছে। হাইব্রিড বেগুনের বিভিন্ন জাত সমূহ হলো
  1. ইসলামপুরী
  2. নয়নকাজল
  3. সাহেব বেগুন
  4. খটখটিয়া
  5. উত্তরা
  6. রাখাইন বেগুন
  7. প্লাস্টিক বেগুন
  8. মাকড়া
  9. উত্তরা
  10. গালিভার
  11. গ্রীনবল-১
  12. শুকতারা
  13. কাজলা এক্সট্রা লং
  14. হীরা
  15. তারাপুরী
  16. কেজি বেগুন
  17. তাল বেগুন
  18. নয়নতারা
  19. ঝুমকা
  20. কুলি বেগুন
  21. ভোলানাথ বারি বেগুন

এই সকল জাত গুলোর মধ্যে আপনার এলাকাই বেগুন চাষীদের সাথে জেনে নিবেন, কোন জাতের বেগুনে তারা ভালো ফলন পাচ্ছে। আপনি তাদের থেকে জেনে সেই জাতেন বেগুন চাষ করবেন।

হাইব্রিড বেগুনের চারা তৈরি পদ্ধতি


বেগুনের চারা তৈরি করে তারপর জমিতে লাগানো হয়। বেগুনের চারা তৈরি করার জন্য উপযুক্ত বীজতলা নির্বাচন করতে হবে। বীজতলার জমি এমন হতে হবে, যেনো পানি না জমে থাকে। শীতকালে বেগুন চাষের জন্য বীজতলাতে বীজ বপন করতে হবে আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসে। হাইব্রিড বেগুনের চারা তৈরি পদ্ধতি গুলো নিম্নে দেওয়া হলো
  • প্রথমে মাটি ঝুঝুরা করে চাষ করতে হবে।
  • এবার সুন্দর করে বীজতলা মাটি তৈরি করতে হবে।
  • এখন বীজতলাই ঘন করে বীজ ছিটাতে হবে।
  • এখন বীজতলাতে ১০ থেকে ১২ দিন পর অন্য বীজতলাতে চারা স্থানান্তর করতে হবে।
  • প্রতি শতাংশ জমিতে বেগুনের বীজ প্রয়োজন হয় ২ গ্রাম।

হাইব্রিড বেগুন চাষে জমি তৈরি ও চারা রোপন পদ্ধতি


হাইব্রিড বেগুন চাষে জমি তৈরি ও চারা রোপনের সঠিক পদ্ধতি নিম্নে দেওয়া হলো
  • হাইব্রিড বেগুন চাষে উর্বর ও যে জমিতে পানি জমে থাকে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
  • জমির আসে পাশে বড় গাছ না থাকা উত্তম। কারণ ছায়া হলে সেই জমিতে গাছ ভালো হবে না।
  • জমিতে ৪ থেকে ৫ টি চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
  • বেগুনের চারা ৫ থেকে ৬ সপ্তাহ বয়সে জমিরে রোপন করতে হবে।
  • ৭৫ থেকে ৮০ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে বেগুনের চারা রোপন করতে হবে।
  • প্রতি সারিতে ৬০ থেকে ৬৫ সে.মি. দূরে দূরে বেগুনের চারা রোপন করতে হবে।
  • বেগুনের চারা রোপনের পূর্বে চারা গুলো গোড়া পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে।
  • জমিতে চারা রোপনের পর সেচ দিতে হবে।

হাইব্রিড বেগুন চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি


হাইব্রিড বেগুন চাষে প্রয়োজ মতো সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগ কম বা বেশি হলে বেগুনের ভালো ফলন পাওয়া যাবে না। সার সঠিক সময়ে প্রয়োগ করতে হবে। যে কোনো সময়ে সার প্রয়োগ করা যাবে না। নিম্নে হাইব্রিড বেগুন চাষে সার প্রয়োগের সঠিক পদ্ধতি দেওয়া হলো
  • প্রথমে জমি প্রস্তুত করার সময় প্রতি শতাংশ জমির জন্য ৪০ থেকে ৫০ কেজি জৈব সার বা গোবর সার, ১ কেজি টিএসপি ও ১ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • চারার বয়স ১২ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • এর পর বেগুন ধরার পূর্বে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • এখন বেগুন ধরার পর সেচ দেওয়ার সাথে সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে।

হাইব্রিড বেগুন চাষে সেচ ও পানি নিষ্কাশন পদ্ধতি


হাইব্রিড জমিতে বেগুন চাষে সেচ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিক সময়ে বেগুনের জমিতে সেচ প্রয়োগ করতে হবে। বেগুন গাছের শিখর মাটির গভীরে বেসি থাকে না, তাই কিছু দিন পর পর সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। যখন গাছে বেগুন ধরে তখন সার প্রয়োগ করার পর জমিতে সেচ প্রয়োগ করতে হবে। অধিক ফলনের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী সার ও সেচ প্রয়োগ করতে হবে। আবার বৃষ্টির পানি জমিতে জমতে দেওয়া যাবে না, পানি জমে থাকলে তা নিষ্কাশন এর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

হাইব্রিড বেগুন চাষে আগাছা ও নিড়ানি দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি


আগাছা হলো সকল ফসলের প্রধান শত্রু। হাইব্রিড বেগুন চাষে আগাছা দেখা দিলে, তা নিড়ানি দিয়ে জমি থেকে ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আগাছা জন্মালে বেগুন গাছের বৃদ্ধি কম হবে, বেগুনের ফলন কম হবে ইত্যাদি। এছারা জমিতে আগাছা থাকলে বিভিন্ন ধরনের রোগে বেগুন গাছ আক্রান্ত হবে। তাই বেগুনের জমিতে আগাছা দেখা দিলে যত দূরত্ব সম্ভব নিড়ানি দিয়ে আগাছা দমন করতে হবে।

হাইব্রিড বেগুন চাষে পোকামাকড় ও রোগদমন পদ্ধতি


হাইব্রিড বেগুন চাষে সবথেকে ক্ষতিকর পোকা হলো ডগা ও বেগুন ছিদ্রকারী পোকা। এছারা বেগুনের আরো অনেক ধরনের পোকা দেখা যায়। বেগুনের যে সকল পোকা গুলো দেখা যায় সেগুলো হলো
  1. কাঁটালে পোকা
  2. বিছা পোকা
  3. জাব পোকা
  4. ছাতরা পোকা
  5. কাটুই পোকা
  6. থ্রিপস
  7. পাতা মোড়ানো পোকা
এই সকল পোকা গুলো বেগুন চাষে বিভিন্ন ক্ষতি করে। এই সকল পোকা গুলো বিভিন্ন রোগের মূল বাহক হিসেবে কাজ করে। বেগুন চাষে যে সকল রোগ গুলো দেখা যায় সেগুলো হলো
  1. ঢলে পড়া রোগ
  2. গোঁড়া পচা রোগ
  3. ফল পচা রোগ
  4. চারা ধসা রোগ
এই সকল রোগ গুলো বেগুনের মারাত্বক ক্ষতি করে। যখন কোনো রোগের লক্ষণ বোঝা যাবে তখনি সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

হাইব্রিড বেগুনের ফলন


এক একটি জাতের বেগুন এক এক রকম ফলন পাওয়া যায়। সাধারণত বেগুন গাছের বয়স ২ থেকে ৩ মাস হলে ফুল আসে ও ফুল আসার ১ মাসের মধ্যে বেগুন খাওয়ার উপযোগী হয়। সাধারণত বেগুনের প্রতি হেক্টর জমিতে ৩০ থেকে ৫০ টন ফলন পাওয়া যায়।

উপসংহারঃ

হাইব্রিড বেগুন চাষ পদ্ধতি ও হাইব্রিড বেগুনের বিভিন্ন জাত সমূহ সম্পর্কে যদি কোনো ভুল তথ্য দিয়ে থাকি তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন। আসা করি, হাইব্রিড বেগুন চাষ পদ্ধতি ও হাইব্রিড বেগুনের বিভিন্ন জাত সমূহ সম্পর্কে কোনো ভুল তথ্য আপনাদের দিতেছি না। এই পোস্টে বানান বা বাক্যে কোনো ভুল থাকলে আমাকে মাফ করবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url