দেশি মুরগির প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি

দেশি মুরগির প্রাকৃতিক চিকিৎসা করতে পারলে ঔষধ খরচ লাগবে না, তাই মুরগি পালনে বেসি লাভবান হতে পারবেন। একটু সতর্কতার সাথে প্রকৃতিক উপায়ে দেশি মুরগিকে সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিতে পারলেই হবে। আপনাকে জানতে হবে কোন সময়ে কোন টি মুরগিকে খাওয়াতে হবে।

আমার নিজের দেশি মুরগির ছোট্টো খামার আছে। আমার খামারে প্রকৃতিক ভাবে চিকিৎসা করে ভালো ফলাফল পাচ্ছি। আমার খামারে আমি যে ভাবে প্রকৃতিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিয়ে থাকি তা বিস্তারিত এই পোস্ট এ আলোচনা করা হবে।

দেশি মুরগির প্রাকৃতিক চিকিৎসা দিতে যে সকল ভেষজ উপকরণ গুলো লাগে-

  • আদা
  • রসুন
  • কাচা হলুদ
  • কেরোসিন
  • মধু
  • তুলসী পাতা
  • নিম পাতা
  • আম পাতা
  • জাম পাতা
  • পেঁয়ারা পাতা
  • কাচ কলা
  • বিট লবণ
  • আমলকী
  • হরতকী
  • বয়ড়া
  • পুইশাক ইত্যাদি।

দেশি মুরগির প্রাকৃতিক চিকিৎসা


দেশি মুরগির প্রাকৃতিক চিকিৎসা


দেশি মুরগির প্রাকৃতিক ভাবে যে সকল চিকিৎসা গুলো করা যায় সেগুলো হলো-
  • ঠান্ডা
  • গামবোরো
  • কৃমি
  • কলেরা
  • আমাশয়
  • করাইজা
  • মুরগির গ্রথ কম
  • ডিম কম দেওয়া ইত্যাদি

দেশি মুরগির ঠান্ডা জনিত রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসাঃ


দেশি মুরগির যদি ঠান্ডা লাগে তাহলে প্রকৃতিক ভাবে চিকিৎসা দেওয়া যায়। যখন দেখবেন আপনার খামারের দেশি মুরগি গুলো নাক ঝাড়া দিতেছে ও শ্বাসকষ্ট হয়তেছে তাহলে বুঝবেন মুরগি গুলোর ঠান্ডা লাগছে। দেশি মুরগির ঠান্ডা জনিত রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা হলো ১০০ গ্রাম আদা, ১০০ গ্রাম কাচা হলুদ, ১০০ গ্রাম রসুন, ২০ ফোটা কেরোসিন, ৪০ ফোটা মধু ও ২০ টি তুলসী পাতা ভালো করে বেটে নিয়ে ৫ কেজি খাবার এর সাথে মিক্স করে, এই খাবার ৩-৫ দিন খেতে দিতে হবে।

দেশি মুরগির গামবোরো রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসাঃ


আপনার খামারে বা বাসাই অল্প কয়েকটি দেশি মুরগি পালন করে থাকলে, কখনো গামবোরো ভাইরাসে মুরগি গুলো আক্রান্ত হলে প্রকৃতিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিতে পারেন। দেশি মুরগির গামবোরো রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা হলো নিম পাতা ১০ টি, তুলসী পাতা ১০ টি, আদা ৫০ গ্রাম, কাচা হলুদ ৫০ গ্রাম, মধু ২০ ফোটা ও কেরোসিন ২০ ফোটা এক সাথে বেটে নিয়ে ২ কেজি খাবার এর সাথে মিক্স করতে হবে। এই খাবার ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে।

দেশি মুরগির কৃমির প্রাকৃতিক চিকিৎসাঃ


দেশি মুরগির কৃমির প্রভাব সব থেকে বেশি। প্রকৃতিক পদ্ধতিতে দেশি মুরগির কৃমির চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। দেশি মুরগির কৃমির প্রাকৃতিক চিকিৎসা হলো তুলসী পাতা ১০ টি, আদা ৫০ গ্রাম, নিম পাতা ১০ টি, মধু ২০ ফোটা ও কাচা হলুদ ৫০ গ্রাম বেটে ২ কেজি খাবার এর সাথে মিক্স করতে হবে। এই খাবার প্রতি সপ্তাহে এক বার দেশি মুরগিকে খেতে দিলে, দেশি মুরগির কৃমির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে।

দেশি মুরগির কলেরা রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসাঃ


দেশি মুরগির কলেরা রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা খুবই ভালো কার্যকর। প্রকৃতিক পদ্ধতিতে দেশি মুরগির কলেরা রোগের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। সাধারণত অপরিষ্কার খাবার দেশি মুগিকে খেতে দিলে কলেরা রোগ হয়ে থাকে। দেশি মুরগির কলেরা রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি হলো ১০ টি আম পাতা, ১০ টি পেয়ারা পাতা ও কাচা কলা সিদ্ধ করে ৫ লিটার পানির সাথে মিক্স করে ৩-৫ দিন খেতে দিতে হবে।

দেশি মুরগির আমাশয় রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসাঃ


আমাশয় রোগ দেশি মুরগির মাঝে মাঝে হয়ে থাকে। আমাশয় রোগ থেকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। দেশি মুরগির আমাশয় রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি হলো ১০ টি আম পাতা, ১০ টি জাম পাতা ও ১০ টি পেয়ারা পাতা বেটে ৫ লিটার পানির সাথে মিক্স করে ৩-৫ দিন দিতে হবে।

দেশি মুরগির করাইজা রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসাঃ


মাঝে মাঝে দেশি মুরগির করাইজা রোগ দেখা যায়। করাইজা রোগটির সূচনা হয় ঠান্ডা থেকে। করাইজা রোগের লক্ষণ গুলো হলো মুরগির অতিরিক্ত ঠান্ডা, মুরগির রোখ মাথা ফুলে যাওয়া, মুরগির চোখে সাদা আস্তরন, মাঝে মাঝে মাথা ঝাড়া দেওয়া ইত্যাদি। প্রকৃতিক পদ্ধতিতে দেশি মুরগির করাইজা রোগের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। দেশি মুরগির করাইজা রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি হলো ২৫ গ্রাম আদা, ২৫ গ্রাম রসুন, ২৫ গ্রাম কাচা হলুদ ও ১০ টি তুলসী পাতা এক সাথে বেটে ৩ লিটার খাবার পানির সাথে মিক্স করে, ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে। মুরগির চোখে Civodex Vet ড্রপ দিতে হবে, দিনে ৩ বার।

দেশি মুরগির গ্রথ কম রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসাঃ


দেশি মুরগির গ্রথ অন্যান্ন মুরগির থেকে তুলোনা মূলক কম হয়ে থাকে। তবে অনেক সময় দেশি মুরগির গ্রথ খুবই কম দেখা যায়। প্রকৃতিক পদ্ধতিতে দেশি মুরগির গ্রথ বৃদ্ধির চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। দেশি মুরগির গ্রথ কম রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি হলো ১০ গ্রাম আমলকী, ১০ গ্রাম হরতকী, ১০ গ্রাম বয়ড়া ও ১০ গ্রাম বিট লবণ এক সাথে মিক্স করে গুড়া করতে হবে। এই মিক্সার প্রতি ২ কেজি খাবার এর সাথে মিক্স করে সপ্তাহে ১ দিন ও মাসে ৪ দিন খেতে দিতে হবে। এই ভাবে খাওয়ালে মুরগির গ্রথ খুবই ভালো হবে।

দেশি মুরগির ডিম কম দেওয়া রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসাঃ


ডিম কম দেওয়া দেশি মুরগির একটি সাধারণ রোগ। সকল খামারে এই কথা টা শোনা যায় যে, দেশি মুরগি কম ডিম দেয়। তবে অন্য মুরগির থেকে তুলোনা মূলক কম ডিম দেয় দেশি মুরগি। প্রকৃতিক পদ্ধতিতে দেশি মুরগির ডিম বৃদ্ধির চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। দেশি মুরগির ডিম কম দেওয়া রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি হলো পুইশাক, রসুন ও বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি কুচি করে খাবারের সাথে খাওয়াতে হবে। এছড়া ডিমের খোসা গুড়া করে খাওয়ালে ক্যালসিয়াম এর চাহিদা পূরণ হবে। কি ভাবে ডিমের খোসা মুরগি কে খাওয়ানো হয় তা আমাদের আর একটি পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে, পোস্ট টি হলো - প্রাকৃতিক উপায়ে অল্প খরচে দেশি মুরগির খাবার তালিকা

FAQ

দেশি মুরগি ডিম কেনো কম দেয়?

ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন ভিটামিন এর অভাবে দেশি মুরগি ডিম কম দেয়। বেশি ডিম পাওয়ার জন্য দেশি মুরগিকে ভিটামিন-ই ও যুক্ত ঔষধ খাওয়াতে হবে, বাজারে ই-ভেট, ই-সেল ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়।

দেশি মুরগির করাইজা রোগ কেনো হয়?

ঠান্ডা থেকে শুরু হয় দেশি মুরগির করাইজা রোগ। এই রোগ হলে দেশি মুরগির মাঠা ফুলে যায় ও চোখ সাদা হয়ে যায়। যত দূরত পাড়া যায় আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করা ও চিকিৎসা করা।

দেশি মুরগির ঠান্ডা কেনো লাগে?

অনেক গুলো কারণ আছে, যার জন্য দেশি মুরগির ঠান্ডা লাগে। যেমন- মুরগির লিটার বা কাঠের গুড়ো যদি ভেজা থাকে। শীতের সময় মুরগির খামারে বাতাশ প্রবাহ করলে ইত্যাদি কোনো ভাইরাস রোগ হলেও মুরগির ঠান্ডা লাগে। খামারে মুরগির ঠান্ডা লাগলে এক সাথে লাগে, তাই আলাদা করার কিছু নাই। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।

দেশি মুরগির গামবোরো রোগ কেনো হয়?

ভাইরাস যে কোনো মাধ্যমে খামারে প্রবেশ করতে পারলে খামারের সকল মুরগি গুলো গামবোরো রোগে আক্রান্ত হয়। এই গামবোরো ভাইরাস যেনো খামারে না প্রবেশ করতে পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।

দেশি মুরগির কৃমি বেশি হয় কেনো?

দেশি মুরগি বিভিন্ন অপরিষ্কার খাবার খায়, তাই দেশি মুরগির কৃমির প্রবণতা বেশি হয়। আমাদের চেষ্টা করতে হবে দেশি মুরগিকে পরিষ্কার খাবার দেওয়া। সাধারণত ৩ মাস অন্তর অন্তর দেশি মুরগিকে কৃমি নাষক ঔষধ দিতে হয়।

দেশি মুরগির কলেরা রোগ কেনো হয়?

করেরা একটি পানিবাহিত রোগ, তাই পানির মাধ্যমে দেশি মুরগির কলেরা রোগ হয়। আমাদের চেষ্টা করতে হবে দিতে ৩ বার খামারে পানি পাল্টে পরিষ্কার পানি দেওয়া এবং পরিষ্কর পানি দিতে হবে। কলেরার জন্য সরকারী ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। প্রণীসম্পদ অধিদপ্তর থেকে কলেরা ভ্যাকসিন টি সংগ্রহ করে মুরগিকে দিয়ে দিবেন। তাহলে কলেরা রোগ থেকে মুক্ত থাকা আসা করা যায়।




উপসংহারঃ


সব শেষে এই কথাই বলবো, দেশি মুরগির প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো কিছু না বুঝতে পারলে কমেন্ট করে জানাবেন। আমি আপনার কমেন্ট এর উত্তর খুব তাড়াতারি দেওয়ার চেষ্টা করবো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url