ব্রয়লার মুরগির ইতিহাস - ব্রয়লার মুরগি কাকে বলে ও ব্রয়লারের জাত সমূহ

সাদা পালক বিশিষ্ট অল্প সময়ে অধিক ওজন হওয়া মুরগিকে ব্রয়লার মুরগি বলে। সাধারণত ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে ব্রয়লার মুরগি বাজারজাতকরণ করা হয়। ব্রয়লার মুরগির ইতিহাস হলো বিভিন্ন উন্নত জাতের মুরগির ক্রস করে, অল্প সময়ে অধিক মাংস উৎপাদনের মুরগির জাত। সকল দেশে ব্রয়লার মুরগি প্রচলিত আছে। ব্রয়লার মুরগির উৎপত্তি হয় প্রোটিন যোগানের অন্যতম মাধ্যমের জন্য। ব্রয়লার মুরগি হলো একটি হাইব্রিড মুরগি। অল্প খরচে মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের অন্যতম মাধ্যম হলো ব্রয়লার মুরগি। আপনি কি জানতে চান ব্রয়লার কী? ব্রয়লার মুরগির ইতিহাস কী? কাকে বলে? উৎপত্তি কারণ কী? কয়টি জাত রয়েছে? তাহলে এই আর্টিকেলে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

ব্রয়লার মুরগি কাকে বলে


বিশ্বে কয়েকটি ব্রয়লারের জাত রয়েছে। কয়েকটি কম্পানির কিছু কিছু জাতের ব্রয়লার মুরগি তৈরি করেছেন। এই আর্টিকেলে কিভাবে হাইব্রিড ব্রয়লার মুরগির জাত তৈরি করা হয়, তা বিস্তারিত দেওয়া আছে।

ব্রয়লার কী? এই প্রশ্ন টি অনেকে করেন। ব্রয়লার হলো একটি মুরগির জাতের নাম। আমরা যেমন বলে থাকি দেশি-মুরগি, লেয়ার-মুরগি, পাকিস্থানি-মুরগি ইত্যাদি, তেমনি ব্রয়লার ও একটি মুরগির জাত। নিম্নে ব্রয়লার মুরগির ছবি ও বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

আজকের "এগ্রখামারির" এই আর্টিকেলের যে সকল বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে সেগুলো হলো-
  • ব্রয়লার মুরগির ইতিহাস
  • ব্রয়লার কী
  • ব্রয়লার মুরগি কাকে বলে
  • ব্রয়লার মুরগির উৎপত্তি
  • ব্রয়লারের জাত
  • ব্রয়লার মুরগির জাত উদ্ভাবনকরণ
  • ব্রয়লার মুরগির জাত উদ্ভাবনকারী কোম্পানি
  • কিভাবে ব্রয়লার মুরগির জাত নির্বাচন করা হয়?
  • ব্রয়লার মুরগির ছবি

ব্রয়লার মুরগির ইতিহাস


মুরগির মাংস একটি সুস্বাদু খাবার। বিশ্বে সকল মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের বড় ভূমিকা রাখে মুরগির মাংস। অল্প খরচে অধিক মাংস উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন উন্নত জাতের মুরগির সাথে ক্রস করে ব্রয়লার মুরগির জাত উদ্ভব হয়। এই মুরগি গুলো মাত্র ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ বয়সে খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে। ভাবো ভাবে ব্রয়লার মুরগি পালন করলে অধিক ওজন পাওয়া যায়।

মুরগির মাংস বৃদ্ধি করার জন্য অনেক গবেষণার পর, বিবিন্ন উন্নত জাতের মুরগি ক্রস করে আবার তাদের মধ্যে ক্রস করে এই জাত পাওয়া যায়। এই জাতের মুরগির নাম দেওয়া হয় ব্রয়লার। এর পর বিশ্বের সকল দেশে ব্রয়লার মুরগির প্রচলন শুরু হয়।

ব্রয়লার কী


ব্রয়লার হচ্ছে মুরগির জেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়ে উদ্ভবিত উন্নত জাতের মুরগি। এই জাতের মুরগি দূরত্ব মাংস উৎপাদন করে সক্ষম। মাত্র ১ মাসে ২ কেজি পর্যন্ত ওজন হতে পারে ব্রয়লার মুরগি। দূরত্ব ওজন বৃদ্ধিতে কোনো অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয় না। তাই ব্রয়লার মুরগির মাংস FDA (Food and Drug Administration) অনুমদন করেছেন।

বিভিন্ন উন্নত জাতের মুরগির সাথে জেনেটিক পরিবর্তন করে প্যারেন্ট ব্রয়লার মুরগি তৈরি করা হয়। এরা এদের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট নিয়ে বেড়ে ওঠে। এই প্যারেন্ট ব্রয়লার মুরগির ডিম থেকে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা পাওয়া যায়।

ব্রয়লার মুরগি কাকে বলে


সাদা পালক বিশিষ্ট অল্প সময়ে অধিক ওজন হওয়া মুরগিকে ব্রয়লার মুরগি বলে। উন্নত জাতের মুরগি জেনেটিক পরিবর্তন করে এমন জাত তৈরি হয়েছে, যেটি অধিক প্রোটিন সমূদ্ধ খাবার হজম করতে পারে। অধিক খাবার হজম করার শক্তি ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। এই কারণে ব্রয়লার মুরগি অল্প সময়ে অনেক ওজন আসে।

ব্রয়লার মুরগির উৎপত্তি


ব্রয়লার মুরগির উৎপত্তি হয় বিভিন্ন মুরগির জাতের ক্রস করে। প্রথমে কিছু ভালো জাতের মুরগি ক্রস করে নিয়ে তার সাথে আবার ভালো জাতের মুরগি ক্রস করে ব্রয়লার এর প্যারেন্ট তৈরি করা হয়। এই প্যারেন্টস থেকে ডিম সংগ্রহ করে, সেই ডিমের বাচ্চা ফোটানো হয়। এই বাচ্চা গুলো ব্রয়লার মুরগি। এর হজম ক্ষমতা অনেক বেশি হয়।

ব্রয়লারের জাত


ব্রয়লারের মধ্যে বিভিন্ন জাত রয়েছে। এই জাত গুলো তৈরি করা হয়,
  • প্রথমে বিশুদ্ধ ভালো জাতের মুরগি নিয়ে যেমন- সাসেক্স, কর্ণিশ, প্লাইমাউথ রক ইত্যাদি।
  • এই জাতের মুরগি গুলো একটি অপরটির সাথে মিলিয়ে একটি নতুন জাত তৈরি হয়।
  • এবার এই নতুন জাতের মুরগি গুলো থেকে বাছায় করে ভালো মুরগি গুলো নেওয়া হয়।
  • নতুন জাতের মুরগির সাথে আবার উন্নত জাতের মোরগ দিয়ে ক্রস করা হয়।
  • এই ভাবে আরো কিছু ধাপে ক্রস করা হয়।
  • এবার এই মুরগি গুলো থেকে গ্রেড-১ প্যারেন্ট তৈরি করা হয়।
  • এবার এই গ্রেড-১ প্যারেন্ট থেকে ব্রয়লার মুরগির প্যারেন্ট তৈরি করা হয়।

ব্রয়লার মুরগির জাত উদ্ভব এর পুরো প্রক্রিয়াটি একটি ছবির মাধ্যমে দেখানো হলো

ব্রয়লারের জাত


ব্রয়লার মুরগির জাত উদ্ভাবনকরণ

ব্রয়লার মুরগির জাত উদ্ভাবনকারী কোম্পানি


বিশ্বে কয়েকটি কোম্পানি আছে, যারা ব্রয়লারের জাত উদ্ভবন করেছে যেমন- টেট্রা, লোহম্যান, হাববার্ড, কব-ভেন্ট্রিস কোম্পানি ইত্যাদি। এই কোম্পানি গুলো ব্রয়লার মুরগির জেনেটিক পরিবর্তন করে ও বিভিন্ন কোম্পানির তত্ব কিনে, ব্রয়লার মুরগি বিভিন্ন নামে ব্রান্ডিং করে। কোম্পানি গুলোন কিছু নাম ও ব্রান্ড নাম নিম্নে দেওয়া হলো-
  • আরবর কম্পানির ব্রয়লার মুরগির ব্রান্ড নাম একর।
  • এভিয়াজেন কোম্পানির ব্রান্ড নাম রস।
  • ইন্ডিয়ান কোম্পানির ব্রান্ড নাম রিভার ইত্যাদি আরো অনেক কোম্পানির বিভিন্ন ব্রান্ড নাম রয়েছে।

কিভাবে ব্রয়লার মুরগির জাত নির্বাচন করা হয়?


আমরা আগেই জেনেছি ব্রয়লার মুরগির জাত উদ্ভবনকারী কোম্পানি বিভিন্ন ব্রান্ড নাম দিয়ে থাকে। কিছু বৈশিষ্টের পার্থক্যের কারনে এই ব্রান্ড নাম গুলো দেওয়া হয়। যেমন রস ব্রান্ডের ৩ টি ব্রয়লার মুরগির জাত রয়েছে-
  1. রস-308
  2. রস-708
  3. রস-308 AP
কব-ভেন্ট্রিস ব্রান্ড এর ২ টি ব্রয়লার মুরগির জাত রয়েছে-
  1. কব-৫০০
  2. কব-৭০০

ব্রয়লার মুরগির এই সকল জাত গুলোন ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট রয়েছে, যেমন-
  • কিছু জাতের তাপ সহ্য ক্ষমতা বেশি।
  • কিছু জাতের তাপ সহ্য ক্ষমতা কম।
  • কিছু জাতের বৃদ্ধির হার ২০ দিন পর থেকে বেশি হয়।
  • কিছু জাতের বৃদ্ধির হার শুরু থেকে ক্রমাগত ভাবে হয়।

এক এক কোম্পানির এক একটি জাতের বৈশিষ্ট ভিন্ন রকম হয়। আপনার খামারের আবহাওয়ার সাথে মিলবে এমন জাতের ব্রয়লার মুরগি পালন করলে, খামারে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। এই জাত গুলোর বৈশিষ্ট সঠিক ভাবে জেনে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা খামারে উঠানো উত্তম।

ব্রয়লার মুরগির জাত সমূহ


ব্রয়লার মুরগির জাত এই বিশ্বের হতে গোনা কিছু কোম্পানি তৈরি করে। আমাদের বাংলাদেশে এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানির ব্রয়লারের জাত আমদানি করা হয়। যে সকল কোম্পানির ব্রয়লার এর জাত আমদানি করা হয়, সেগুলো হলো-

কব-ভেনট্রিস কোম্পানির ব্রান্ড

  1. কব-500
  2. কব-700

এভিয়াজেন কোম্পানির ব্রান্ড

  1. ইণ্ডিয়ান রিভার ব্রান্ড
  2. লোহম্যান মিট, বর্তমানে এর নাম "আই আর"

আরবর একর’স ব্রান্ড

  1. রস ব্রান্ড
  2. রস-308
  3. রস-708

হাববার্ড কোম্পানির ব্রান্ড

  1. এফিসিয়েন্সি প্লাস
  2. হাববার্ড এফ ১৫, বা হাবার্ড ক্লাসিক

ব্রয়লার মুরগির ছবি


নিম্নে ব্রয়লার মুরগির ছবি দেওয়া হলো-

ব্রয়লার মুরগির ছবি

FAQ

কোন জাতের মুরগি থেকে ব্রয়লারের প্যারেন্ট তৈরি হয়?

বিভিন্ন উন্নত জাতের মুরগি থেকে ব্রয়লারের প্যারেন্ট তৈরি হয়। যেমন- সাসেক্স, কর্ণিশ, প্লাইমাউথ রক ইত্যাদি।

ব্রয়লার কী?

ব্রয়লার হচ্ছে মুরগির জেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়ে উদ্ভবিত উন্নত জাতের মুরগি।

ব্রয়লার মুরগি কাকে বলে?

সাদা পালক বিশিষ্ট অল্প সময়ে অধিক ওজন হওয়া মুরগিকে ব্রয়লার মুরগি বলে। উন্নত জাতের মুরগি জেনেটিক পরিবর্তন করে এমন জাত তৈরি হয়েছে, যেটি অধিক প্রোটিন সমূদ্ধ খাবার হজম করতে পারে।

ব্রয়লার মুরগির জাত গুলো কি কি?

ব্রয়লার মুরগির জাত গুলো হলো কব-500, কব-700, রস-308, রস-708 ইত্যাদি।

কিভাবে ব্রয়লার মুরগির জাত নির্বাচন করা হয়?

আমরা আগেই জেনেছি ব্রয়লার মুরগির জাত উদ্ভবনকারী কোম্পানি বিভিন্ন ব্রান্ড নাম দিয়ে থাকে। কিছু বৈশিষ্টের পার্থক্যের কারনে এই ব্রান্ড নাম গুলো দেওয়া হয়।


উপসংহারঃ

ব্রয়লার মুরগির ইতিহাস - ব্রয়লার মুরগি কাকে বলে ও ব্রয়লারের জাত সমূহ সম্পর্কে যদি কোনো ভুল তথ্য দিয়ে থাকি তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন। আসা করি, ব্রয়লার মুরগির ইতিহাস - ব্রয়লার মুরগি কাকে বলে ও ব্রয়লারের জাত সমূহ সম্পর্কে কোনো ভুল তথ্য আপনাদের দিতেছি না। এই পোস্টে বানান বা বাক্যে কোনো ভুল থাকলে আমাকে মাফ করবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url