পাইলস এর চিকিৎসা, হওয়ার কারণ, লক্ষণ, ঔষধ, ক্রিম ও খাবার তালিকা

পাইলস এর চিকিৎসা

পাইলস : অনেকে হয়তো পাইলস সম্পর্কে জানে না। যার পাইলস হয়েছে সেই বোঝে পাইলসের ব্যাথা আর কষ্ট কেমন হয়। পাইলস হলো মলদ্বারের রোগ, মলদ্বারের ভিতরে ও বাইরে আঁচিল এর মতো গুটি তৈরি হয় এবং ফুলে যায়। এই পাইলস থেকে মাঝে মাঝে অনেক ব্যাথা অনুভব হয় ও রক্তপাত হয়। অনেক সময় মলত্যাগ এর সময় পাইলস বাইরে বের হয়ে আসে।

পাইলস এর ছবি : পাইলস বিভিন্ন রকম হতে পারে কারো কম বা বেশি। আপনাদের বোঝার জন্য পাইলস এর একটি ছবি দিলাম।

পাইলস এর ছবি

পাইলস হওয়ার কারণ : অনেক গুলো কারণে পাইলস হতে পারে। পাইলস হওয়ার প্রধান কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। এই কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মলত্যাগ করার সময় অনেক চাপ প্রয়োগ করতে হয়, অধিক সময় ধরে এই সমস্যাই ভুগলে পাইলস হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে। গর্ভকালিন সময়ে নারীরা, যাদের মেদ বেশি, যারা অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে কাজ করে ইত্যাদি তাদের পাইলস হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।

পাইলস কি কেন হয় : পাইলস হলো মলদ্বারে গুটি হওয়া। পাইলস সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য, মেদ বেশি হওয়া, গর্ভকালিন সময়ে, অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে কাজ করার কারনে হয়। এছাড়া আরো কিছু কারণে পাইলস হতে পারে।

পাইলস এর প্রাথমিক লক্ষণ : শুরুতে পাইলস এর কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেয় যেমন- পায়ুপথে অল্প ব্যাথা অনুভব করা, পায়ুপথের মুখ হালকা ফুলে জাওয়া, মলত্যাগ এর সময় ব্যাথা পাওয়া। এই সকল লক্ষণ গুলো হলো পাইলস এর প্রথমিক লক্ষণ। এই গুলো হলে বুঝতে হবে আপনার পাইলস হয়েছে।

পাইলস রোগের লক্ষণ : আমরা খুব সহজে পাইলস এর লক্ষণ গুলো বুঝতে পারি। পাইলসের লক্ষণ গুলো আমরা এখন আপনাকে জানাবো। পাইলসের লক্ষন গুলো জানার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন পাইলস ২ ধরণের, একটি হলো অভ্যন্তরীণ পাইলস এবং আর একটি হলো বাহ্যিক পাইলস।

অভ্যন্তরীণ পাইলস এর লক্ষণ গুলো কি কি : কয়েকটি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে আপনার অভ্যন্তরীণ পাইলস হয়েছে। পাইলস রোগের লক্ষণ গুলো হলো - পাইলস ভিতরে ফুলে থাকে, এর কিছুদিন পর পাইলস বাইরে চলে আসে, পাইলস ফুলে বাইরে চলে আসে ইত্যাদি।

বাহ্যিক পাইলস এর লক্ষন : মলদ্বারের বাইরে আঁচিল এর মতো গুটি হয় সেটি হলো বাহ্যিক পাইলস এর লক্ষন। এই পাইলস অনেক ব্যাথা ও চুলকানি হয়।

পাইলস এর প্রাথমিক চিকিৎসা : প্রথমে পাইলস এর অপরেশন ছাড়া ভালো হয়। প্রথমিক ভাবে চিকিৎসা দিলে পাইলস ভালো হওয়ার সম্ভবনা থাকে। আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ডাক্তার খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন করে সাক-সবজি ও অনেক পানি পান করতে হবে। এছাড়া মল নরম করার জন্য ডাক্তার কিছু ঔষধ দিতে পারে।

পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধের নাম : আপনি ডাক্তার এর কাছে গেলে ডাক্তার আপনাকে পাইলস এর জন্য কিছু ঔষধ দিবে। পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ এর নাম গুলো হলো - Normanal 500mg Tablet, Daflon 500mg Tablet, Hemorif Tablet ইত্যাদি। ডাক্তার সাধারণত পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ গুলো ব্যবহার করা হয়।

পাইলস রোগের চিকিৎসা : পাইলস রোগ এর সঠিক চিকিৎসা না হলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। পাইলস রোগের কিছু ঔষধ দিয়ে ও খাবারের কিছু নিয়ম পরিবর্তন করতে হবে। ভালো কোনো ডাক্তার এর কাছে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। আপনারা কখনো পাইলস এর জন্য হাতুরে ডাক্তার এর কাছে চিকিৎসা করবেন না, এতে আপনার ক্ষতি হতে পারে।

পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা : পাইলস এর প্রথম পর্যায়ে ডাক্তার এর চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা করতে পারেন। পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা হলো
1. গরম পানির ভাপ - আপনি মলত্যাগ করার পর ১৫ মিনিট ধরে গরম পানির ভাপ মলদ্বারে দিতে হবে।
2. ইসবগুলের ভূষি - মল নরম করার জন্য ইসবগুলের ভূষি প্রতিদিন খেতে পারেন।
3. অ্যালোভেরা জেল - মলদ্বারে জ্বালা ও ব্যাথা দূর করার জন্য অ্যালোভেরা লাগাতে পারেন।
4. বরফ - মলদ্বারে বরফ দিয়ে স্যাঁক দিলে প্রদাহ থেকে আরাম পাওয়া যায়।
5. ফাইবার যুক্ত খাবার - পাইলস এর জন্য ফাইবার যুক্ত খাবার খেতে হবে। এতে মল নরম হয়।

পাইলস এর ক্রিম : বিভিন্ন ক্রিম রয়েছে যেগুলো পাইলস এর জন্য অনেক কার্যকর হয়। পাইলস এর ক্রিম বাংলাদেশ অনেক নামে পাওয়া যায়। এই ক্রিম বা মলম এর ব্যবহারে ব্যাথা ও প্রদাহ কমে।

পাইলস এর ক্রিম স্কয়ার : স্কায়ার কম্পানির পাইলস এর টি ভালো কাজ করে। পাইলস এর ক্রিম স্কয়ার কম্পানির ঔষধের নাম Erian Ointment.

পাইলস এর মলম নাম : যে সকল পাইলসের মলম গুলো ভালো কাজ করে সেগুলো নিম্নে দেওয়া হলো। পাইলস এর মলমের নাম গুলো হলো ডোবেসিল এলডি অয়েন্টমেন্ট, Erian Ointment, Rectocare Ointment , Anustat Cream, Dictamni Cream ইত্যাদি।

পাইলস এর এলোপ্যাথিক ঔষধ : বিভিন্ন এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা পাইলস রোগির জন্য দিয়ে থাকে। পাইলস এর এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম গুলো হলো Alvenor Tablet, Normanal 500mg Tablet, Pilestop Tablet, Hemorif Tablet, Daflon 500mg Tablet ইত্যাদি।

পাইলস এর হোমিও চিকিৎসা : হোমিও চিকিৎসা তে পাইলস রোগে অনেক ভালো কাজ করে। পাইলসের হোমিও চিকিৎসা করার জন্য আপনি কোনো ভালো ডাক্তার এর কাছে যাবেন। মনে রাখবেন পাইলস কে ছোটো করে দেখবেন না।

পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ হোমিওপ্যাথি : সাধারণত হোমিও ডাক্তার পাইলেস এর চিকিৎসা করার জন্য যে সকল ঔষধ ব্যবহার করে তা দেওয়া হলো। পাইলস এর হোমিও ঔষধের নাম গুলো হলো AESCULUS HIP 30, Adel 2 ইত্যাদি।

পাইলস এর হামদর্দ চিকিৎসা : অনেকে এলোপ্যাথিক ও হোমিও চিকিৎসা নিয়েও পাইলস থেকে মুক্ত হতে পারেন না। তাদের জন্য বলছি আপনারা পাইলস এর হামদর্দ চিকিৎসা নিতে পারেন। এর জন্য আপনি ভালো একজন ডাক্তার এর কাছে যাবেন। হামদর্দ এর পাইলস এর ঔষধ গুলো হলো মা'জুন ওশবা, হ্যানরয়েড বি ইত্যাদি।

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় : পাইলস থেকে মুক্তির জন্য খাবারের মেনু পরিবর্তন করা একান্ত প্রয়োজন। পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় গুলো হলো মাংস কম খাওয়া, বেশি বেশি পানি পান করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ইসবগুল এর ভূষি খাওয়া, বিভিন্ন ফল ও সাক-সবজি খাওয়া ইত্যাদি।

পাইলস এর ঔষধি গাছ : পাথরকুচি হলো পাইলস এর মহা ঔষধি গাছ। পাথরকুচি এর পাতা বেটে রস করে গোল মরিচ এর সাথে মিক্স করে প্রতিদিন খেলে পাইলস থেকে আরাম পাওয়া যায়।

পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয় : পাইলস হলো মহা সমস্যা যুক্ত রোগ। পাইলস হলে মল ত্যাগ করার সময় ব্যাথা অনুভব হয়, যেকোনো সময়ে ব্যাথা অনুভব হয়, রক্তপাত হতে পারে, অসস্থিকর লাগে ইত্যাদি এই সকল সমস্যা হয়।

পাইলস এর ব্যাথা কমানোর ঔষধ : অনেক সময় পাইলস এর জন্য অধিক ব্যাথা করে। এছাড়া মাঝে মাঝে ব্যাথা শুরু হয়। পাইলস এর ব্যাথা কমানোর ঔষধ এর নাম হলো Pilosol Ointment. এই ঔষধ টি সাময়িক পাইলস এর ব্যাথা থেকে আরাম দেয়।

পাইলসের রক্ত পড়া বন্ধের ঔষধ : অনেক গুলো ঔষধ পাওয়া যায় পাইলসের রক্ত পড়া বন্ধ হওয়া জন্য। পাইলসের রক্ত পড়া বন্ধের ঔষধ এর নাম গুলো হলো Normanal 500gm, Pilestop, Aesculus, Calcarea Fluorica, Blumea Odorata, Cinnabaris ইত্যাদি।

পাইলস এর চিকিৎসা কোথায় ভালো হয় : পাইলস রোগে আক্রান্ত হলো কখনো ছোটো করে দেখবেন না। পাইলস এর যে সকল রোগির অপারেশন করতে হয় তার বেশির ভাগ রোগি আগে কোনো হাতুরে ডাক্তার বা কবিরাজি চিকিৎসা নিয়েছে। এই জন্য প্রথমে ভালো কোনো ডাক্তার এর কাছে চিকিৎসা করাবেন। পাইলস এর চিকিৎসা ঢাকা সহরে ভালো হয়। একটু খেজ নিয়ে আপনার পরিচিত কারো সাথে যেগাযোগ করবেন।

পাইলস এর ফোলা কমানোর উপায় : পাইলস এর ফোলা কিছু নিয়ম মানলে কমানো যাবে। মল নরম করার জন্য কিছু ঔষধ বা সঠিক খাবার খেতে হবে। বরফ এর স্যাঁক নিয়মিত দিতে হবে। এছাড়া আপনি ভালো কোনো ডাক্তার এর পরামর্শ গ্রহন করতে পারেন।

পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ : খাবার এর পরিবর্তন হলো পাইলস রোগের প্রথম চিকিৎসা। পাইলস হলে কি কি খাওয়া যাবে না সেগুলো হলো - দুধ, মাংস, মদ, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, ময়দা ও চিনি, কফি ও চা, ধূমপান, ফাস্টফুড, আইসক্রিম, চিপস ইত্যাদি। এই সকল খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।

পাইলস হলে কি কি খাওয়া যাবে : পাইলস এর খাবার এর প্রতি অধিক মনোযোগ দিতে হবে। কি খেলে পাইলস ভালো হয় সেগুলো জেনে সেই সকল খাবার গুলো খেতে হবে। পাইলস রোগীর খাবার তালিকা হলো ফাইবার সমৃদ্ধ ফল কিংবা শাকসবজি, প্রচুর পরিমাণে পানি, রাজমা, মটরশুঁটি, ডাল, ঢেঁকিতে ছাঁটা চাল, কলা, পেঁপে, কিসমিস, আলুবোখারা, আঙুর, আপেল, টমেটো, শসা, পেঁয়াজ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, ব্রোকলি ইত্যাদি।

পাইলস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে : ডিম কম খেতে হবে, তবে পাইলস হলে ডিম না খাওয়া ভালো।

পাইলস এর চিকিৎসা খরচ : অনেকে জানতে চাই পাইলস অপারেশন খরচ কত হয়। অস্ত্রোপচারের ধরণ সকলের একরকম হয় না। পাইলসের লেজার অপারেশন খরচ এক এক জনার ভিন্ন হয়ে থাকে। পাইলস লেজার অপারেশন খরচ ৫০,০০০ টাকা থেকে আরো বেশি হতে পারে। আপনারা খরচ একটু বেশি হলেও ভালো ডাক্তার এর কাছে পাইলস এর অপারেশন করবেন।

পাইলস কি ভালো হয় : বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা করলে অপারেশন ছাড়াই প্রায় ৯০ ভাগ পাইলস ভালো হয়। আপনারা ভালো ডাক্তার এর কাছে থেকে পাইলস এর চিকিৎসা নিবেন।

পাইলস থেকে কি ক্যান্সার হয় : যদি বার বার পাইলস এর অপারেশন করেন তাহলে ক্যান্সার হতে পারে। পাইলস হলেই যে ক্যান্সার হয় তা কিন্তু না।

পাইলস রোগ পরিচিতি

রোগের নাম

পাইলস

হওয়ার কারণ

প্রধান কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য

লক্ষণ

পায়ুপথে অল্প ব্যাথা অনুভব করা, পায়ুপথের মুখ হালকা ফুলে জাওয়া, মলত্যাগ এর সময় ব্যাথা পাওয়া।

চিকিৎসা

প্রথমে পাইলস এর অপরেশন ছাড়া ভালো হয়। প্রথমিক ভাবে চিকিৎসা দিলে পাইলস ভালো হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

পাইলসের মলমের নাম

Erian Ointment, Rectocare Ointment , Anustat Cream, Dictamni Cream ইত্যাদি।

পাইলসের হোমিও ঔষধের

AESCULUS HIP 30, Adel 2 ইত্যাদি।

পাইলসের ঔষধি গাছ

পাথরকুচি

পাইলসের ব্যাথা কমানোর ঔষধ

Pilosol Ointment.

পাইলসের রক্ত পড়া বন্ধের ঔষধ

Normanal 500gm, Pilestop, Aesculus, Calcarea Fluorica, Blumea Odorata, Cinnabaris ইত্যাদি।

পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ

দুধ, মাংস, মদ, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, ময়দা চিনি, কফি চা, ধূমপান, ফাস্টফুড, আইসক্রিম, চিপস ইত্যাদি।

পাইলস হলে কি কি খাওয়া যাবে

ফাইবার সমৃদ্ধ ফল কিংবা শাকসবজি, প্রচুর পরিমাণে পানি, রাজমা, মটরশুঁটি, ডাল, ঢেঁকিতে ছাঁটা চাল, কলা, পেঁপে, কিসমিস, আলুবোখারা, আঙুর, আপেল, টমেটো, শসা, পেঁয়াজ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, ব্রোকলি ইত্যাদি।


শেষ কথা


পাইলস হলে আপনারা প্রথমে ভালো কোনো ডাক্তার এর পরামর্শ নিবেন। হাতুরে ডাক্তার বা কবিরাজি ঔষধ খেয়ে এক সময় অপারেশন করার পর্যায়ে চলে আসে। পাইলস অপারপশন ছাড়াও ভালো হয়। তাই আপনার একালাই পাইলস এর ভালো চিকিৎসা দেই এমন ডাক্তার খুজে বের করবেন, তারপর তার কাছে চিকিৎসা নিবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url